বাঙ্গালি জাতির মুক্তির পথ মেলে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। বাংলাদেশে প্রায় চাকরির পরিক্ষাতেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে ভাইবাতে যে প্রশ্ন হয় তা নিয়ে আজকে কথা বলব।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সময়ে এদেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন হয়। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের মাধ্যমে জন্ম দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের।
মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন ধরনের অন্যায়, অত্যাচার সহ্য করা শুরু হয়। অর্থনৈতিক সুবিধাবঞ্চিত, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুকি, চাকরি, শিক্ষাসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে আমরা বঞ্চিত হতে থাকি।
১৯৫২ সালে আমরা যখন পাকিস্তানের কাছে ভাষার জন্য দাবি জানাই এবং পরবর্তীতে আন্দোলন করি। তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হওয়াটা শুরু করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আমাদের সালাম, রফিক, সফিকসহ অনেককে জীবন দিতে হয়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে মুসলীম লীগের পরাজিত করা হয়। ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়।
১৯৬৬ সালে বাঙ্গালি জাতির মুক্তির সনদ বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফার জন্য আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুন্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিরসহ পাকবাহিনীর অধ:পতন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের শোচনীয় পরাজয়। নির্বাচনে জয় লাভ করার পরও বাঙ্গালীকে গদীতে বসতে দেয় নি। এর ফলে বাঙ্গালি আরও ফুসে উঠেছে।
১৯৭১ সালে চুড়ান্তভাবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এছাড়াও মুসলীম লীগকে ভেঙ্গে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। এর মাধ্যমেও মুক্তিযুদ্ধের কিছুটা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটে।
এছাড়াও অনেক বিদেশি ছিল যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা
বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের সময়কাল থেকে পাকিস্তানের এ অঞ্চল সম্পর্কে টালবাহানা বুঝতে পারেন। তাই তিনি বাঙ্গালি জাতিকে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। তিনি বাঙ্গালি জাতির মুক্তির জন্য নিজের জীবনসহ ফ্যামিলির সবার জীবনকে বাজি রাখে। পাকিস্তানের জন্ম লগ্ন থেকেই তিনি এ অঞ্চলকে আলাদা করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা করেন। এবং তারই ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিড়ে পড়ে।
বহুল জিজ্ঞাসিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাইভা প্রশ্নসমূহ
১। মুক্তিযুদ্ধে কোন খেতাব লাভ করে কোন তিনজন সেক্টর কমান্ডার?
= মেজর জলিল, মেজর নাজমুল হক ও মেজর আবু ওসমান চৌধুরী।
২। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কী?
= ভারত নিয়মিত বাহিনী (সেক্টর কমান্ডারদের অধীন) সহ গেরিলা বাহিনীকে প্রশিক্ষন দেয়। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শরনার্থীদের আশ্রয় দেয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ করে। যেসব দেশে ভারতের মিশন ছিলো, সেসব দেশে বাঙ্গালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে তৎপরতা চালায়। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ যৌথবাহিনী গঠণের মাধ্যমে সম্মুখ সমরে সহযোগিতা করেন। এবং দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৩। মুজিব বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর মধ্যে পার্থক্য কী?
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাঙ্গালি সেনা, ছাত্র ও সাধারন জনতার সমন্বয়ে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। অপরদিকে সামরিক ও বেসামরিক জনগণকে নিয়ে ১৯৭১ সালে ১১ জুলাই মুজিবনগর সরকার পরিকল্পিত উপায়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়।
৪। পাকিস্তানি বাহিনীকে কেন হানাদার বাহিনী বলা হয়?
অন্যায়ভাবে আক্রমণকারীকে হানাদার বলে। যেহেতু পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে নিরীহ বাঙ্গালির উপর অতর্কিত ও অন্যায়ভাবে নৃশংস আক্রমন চালায়। তাই তাদেরকে হানাদার বাহিনী বলা হয়।
৫। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাতটি প্রাচীর কী নির্দেশ করে?
সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌভ মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ৭টি পর্যায়কে নির্দেশ করে। যথা: ১। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ২। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন। ৩। ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ৪। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। ৫। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন। ৬। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুন্থান। ৭। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ।
৬। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতাকারী রাষ্ট্র ও সংগঠন
= সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) ও ভারত। জাতিসংঘ, কনসার্ট ফর বাংলাদেশ (বিস্তারিত জানা দরকার)।
৭। মুক্তিযুদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স সম্পর্কে বলুন।
= মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় এর সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে কিংবা তাঁর পূর্বে কমপক্ষে ১২ বছর ৬ মাস হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবে।
৮। বঙ্গবন্ধু ৭ ই মার্চের ভাসনে কেন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি?
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি জানতে পারেন যে সেনা বাহিনীর ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছে। ঘোষনা দিলেই নির্বিচারে গণহত্যা চালাবে। তাই তিনি বড় ধরনের নাশকতা এড়াতে ৭ই মার্চ পরোক্ষ ভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।
বাংলাদেশের নামকরণ কিভাবে হয়? এতে কার অবদান বেশি?
= বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে মাজার প্রাঙ্গণে দাড়িয়ে বলেন, আমার পূর্ব বাংলা নয়, পূর্ব পাকিস্তান নয়, জনগণের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে বাঙ্গালি জাতির এ আবাস ভূমির নাম বাংলাদেশ।
২৩ মার্চ কেন বিখ্যাত?
= শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কর্তৃক লাহোর প্রস্তাব পাস করে। বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে জাতীয় পতাকার উত্তোলন করেন। এবং ২৩ মার্চ ১৯৬৬ লাহোরে ছয় দফার আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হয়।
সংগ্রহে: মিম ইসলাম।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিল, বাংলাপিডিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়।
শেষকথা
আপনি যদি ভাইবাতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাইবাতে যে প্রশ্ন হয় তা না পারেন। তাহলে আপনার প্রতি তাদের হয়ত নেগেটিভ সেন্স তৈরি হবে। তাই এই অংশ ভাল করে রপ্ত করে ভাইবাতে উপস্থিত হবেন। আপনার জন্য শূভ কামনা রইল।